ফ্যাট ম্যান ফিল্মের মাধ্যমে কিছুদিন ধরেই চেষ্টা করে যাচ্ছি ‘বাংলাদেশ ফুড এন্ড বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রি’র মার্কেটিং সাইডের ঘাটতি কিভাবে কমানো যায়। ক্লায়েন্ট ডাটাবেজ ঘাটতে গিয়ে দেখলাম বহু রেস্টুরেন্ট ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। ফ্যাট ম্যান ফিল্মের ফাউন্ডার এবং সি ই ও হিসেবে এই বিষয়টি আমার জন্য বেশ দুঃখজনক। কেননা রেস্টুরেন্ট ব্যবসা যদি না টেকে তাহলে ফ্যাট ম্যান ফিল্মের মতো কন্টেন্টে বিশ্বাসী এজেন্সিগুলিও টিকবেনা। অথচ এই রকম ক্ষতির মুখে দাঁড়িয়ে এই নির্দিষ্ট বিষয়টি নিয়ে তেমন কোনো বিষদ আলোচনা এখনো দেখা যায় না। এজন্য পারস্পরিক সুবিধার কথা ভেবেই রেস্টুরেন্ট মালিকদের জন্য থাকছে বিশেষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ।
চট জলদি নয়
ঝোঁকের বসে তাড়াহুড়ো করে রেস্টুরেন্ট না খুলে, প্রথমে বসে ঠান্ডা মাথায় প্ল্যান করে নিন। এরপর মোট বাজেটের পুঙ্খানুপুঙ্খ ব্রেক ডাউন করুন। যেমনঃ স্টার্ট-আপ খরচ (স্পেস, ইন্টিরিয়র, কিচেন সামগ্রী, লাইসেন্স ইত্যাদি), প্রতি মাসের ফিক্সড খরচ (স্পেসের ভাড়া বা মেইন্টেনেন্স ফি, ইন্সুরেন্স ইত্যাদি), প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল খরচ (রান্নার উপকরণের খরচ, ইউটিলিটি বিল, এমপ্লয়ি ফি ইত্যাদি)।
বাজেটের দুই তৃতীয়াংশ ইন্টিরিয়রে নয়
যেমন ধরুন আপনার মোট বাজেট ১০ হাজার টাকা, এর মধ্যে ৯ হাজার টাকায় আপনার ড্রিম ইন্টিরিয়রে খরচ থেকে বিরত থাকুন। মোট বাজেটের ব্রেক ডাউন থেকে একদম নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসে আগে গুরুত্ব দিন। যেমনঃ কিচেন, রেফ্রিজারেশন, পানি , পরিবেশনের স্থান এবং লাইটিং। এরপর যদি আপনার মনে হয় যে ইতালি থেকে ইম্পোর্টেড এক্সপ্রেসো মেশিন হলে ভালো হয়, সেক্ষেত্রে তার আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন যে এই মুহুর্তে এই মেশিনটি আসলেই যথার্থ কিনা? উত্তর যদি ‘না’ হয় তবে পুশ ব্যাক করুন। মোটকথা শুরুতেই নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের বাইরে কোনো অতিরিক্ত ইনভেস্টমেন্ট নয়।
মার্কেটিং ক্যাশ
সম্ভাব্য গ্রাহকদের আকর্ষণ করতে প্রমোশনাল অ্যাড, ফুড ফটোগ্রাফি , কনটেন্ট, নিজস্ব পেজ অথবা লোগো ডিজাইনের এর জন্য কিছু ক্যাশ হাতে রাখুন ।
নতুন আইটেম চালু করার জন্য মজুদ ক্যাশ
হাতে সবসময় কিছু ক্যাশ মজুদ রাখুন যাতে কিনা আপনার ‘ড্রিম আলুর চপ’ সাফল্যের চেহারা না দেখলে, টিকে থাকার জন্য গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী কলিজার সিঙ্গারা বিক্রি করতে পারেন।
ভিন্ন ভিন্ন এজেন্সি ট্রাই করা থেকে বিরত থাকুন
একটা এজেন্সি ব্যর্থ হলে ধুম করে নতুন নতুন এজেন্সি ট্রাই করার প্রবণতা সচরাচর রেস্টুরেন্ট মালিকদের মধ্যে বিদ্যমান। এতে করে আপনার ব্যবসা আরো ক্ষতিগ্রস্থ হবার সম্ভাবনা রয়েছে। এই কারনে ঘন ঘন এজেন্সি পরিবর্তন না করে যেই এজেন্সির সাথে কাজ করছেন তাকে একটু বেশি সময় দিয়ে নিজের চাহিদার কথা বুঝিয়ে বলুন, গঠনমূলক আলোচনা করুন এবং সম্মিলিতভাবে সমাধান খুঁজে বের করুন।
অনলাইন মার্কেটিং নিয়ে ওভারথিংকিং নয়
আজকাল অনলাইন মার্কেটিং নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করা একটি অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। বেশিরভাগ রেস্টুরেন্টের মালিক ভাবেন তিনি নিজেই একজন ব্র্যান্ডিং এবং মার্কেটিং গুরু। এমনটি যদি আপনার ক্ষেত্রে হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে আপনার সুরে সুর মেলানো এমপ্লয়ি এপয়েন্ট থেকে বিরত থাকুন। এমন কাউকে এপয়েন্ট করুন যে কিনা আপনার সাথে দ্বিমত পোষণের সাহস রাখে। গঠনমূলক সমালোচনা উৎসাহ দিন, এতে করে নতুন সম্ভাবনা তৈরী হবে।
ইম্পোর্টেড উপরকণ নিয়ে অতিরিক্ত মাতামাতি নয়
রান্নার উপকরণগুলো ইম্পোর্টেড কিনা এই নিয়ে বেশি মাতামাতি কম করুন। কারণ আমাদের দেশের মতো খাদ্য ও দ্রব্যমূল্য সংবেদনশীল একটা দেশে, কিছুদিনের মাথায় আপনি সেলিং প্রাইজের সাথে সামঞ্জস্য রাখতে ব্যর্থ হবেন। আমি নিজে এমন অনেক উদাহারণ পেয়েছি যেখানে সেলিং প্রাইজের সাথে সামঞ্জস্য রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় ইম্পোর্টেড উপকরণ থেকে সরাসরি ফার্মগেট থেকে উপকরণ কিনতে বাধ্য হয়েছে বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট।
সবকিছুর মধ্যে মাথা ঢুকাবেন না
মাইক্রো ম্যানেজিং বিষয়টা বাঙালিদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশ্রিত। সব ধরনের কাজ আমরা একাই করে ফেলতে চাই, তাতে পারদর্শিতা থাকুক অথবা না থাকুক। এই ধরনের অভ্যাস আপনার ব্যবসা ডোবাতে যথেষ্ট, ট্রাস্ট মি! সুতরাং যে কাজের জন্য যে নিযুক্ত এবং পারদর্শি তার উপর সেটা ছেড়ে দিন, মালিক হিসেবে শুধু সময় মত ফলো-আপ করুন।
ধৈর্যশীল হন
শুধু রেস্টুরেন্ট নয় যেকোন ব্যবসার বৃদ্ধির জন্য কিছু সময় প্রয়োজন। রোজ একরকম সেল নাও হতে পারে এই কথা মাথায় রাখা জরুরি। আমি এমন মালিকদের দেখেছি যারা কয়েক দিন বা কয়েক মাসেই আশা হারিয়ে ফেলেছেন। এতে করে ব্যবসা ডোবার আগেই ডুবে যায়। ব্যবসা ঘুরে দাঁড় করাতে হলে অবশ্যই লেগে থাকতে হবে।
ডেলিভারি ট্রাপ
অস্থায়ী কিছু উপার্জনের আশায় অনেক রেস্টুরেন্ট বিভিন্ন ডেলিভারি সার্ভিস ব্যবহার করে ক্ষতিগ্রস্থ হন। দীর্ঘ সময় এমন চলতে থাকলে আপনি আপনার ব্যবসা পুরোটা হারিয়ে বসতে পারেন। এই কারণে আজকাল বড় বড় রেস্টুরেন্টগুলি নিজস্ব ডেলিভারি প্যানেল ব্যবহার করছেন। সুতরাং সাময়িক ডেলিভারি সার্ভিস ব্যবহারের আগে ঠিক করে ক্ষতিয়ে দেখুন যে এটি আপনার ব্যবসার জন্য উপকারী কিনা।
মাত্রাতিরিক্ত পার্টনারশিপ থেকে বিরত থাকুন
রেস্টুরেন্ট ইন্ডাস্ট্রি বাংলাদেশে এখন বিশাল আকারের একটি শিল্প। প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পার্টনার থাকাটা গোড়ায় গলদ এনে দিতে পারে। পার্টনার নিয়ে যদি খুব বেশি কনফিডেন্ট না হন অথবা পার্টনার কেবলই ডামির ভূমিকা পালন করবে এই সন্দেহ থাকে এবং আপনার একারই যদি বেশির ভাগ কাজ করতে হবে বলে মনে হয়, সেক্ষেত্রে পার্টনারশিপে রেস্টুরেন্ট খুলবেন না। ধৈর্য ধরুন, আরও কিছু নগদ অর্থ সঞ্চয় করুন এবং একাই শুরু করুন।
বিজনেস সাইড অপশন নয়
রেস্টুরেন্ট এর ব্যবসা তো পার্ট-টাইম, সুতরাং ফুল-টাইম এর মতো ডেডিকেশন দরকার নেই, এই ধরনের মাইন্ড সেটআপ যদি থাকে তবে আপনি বিশাল বড় ভুল করছেন। ব্যবসা এতোটা সহজ না। ফুল-টাইম জবের চেয়েও বেশি ডেডিকেশন এবং মোটিভেশন দরকার পড়বে এখানে। কারণ দিন শেষে লাভ-ক্ষতির দায়ভার সবই আপনার।
খাবারের মান এ আপোষ নয়
আপনি হয়তো ভাবছেন কেন আমি এখনো খাবারের মান এর কথা বলছি না! খাবারের মানই তো এক নম্বর কারণ হওয়া উচিত। ঠিক? আসলেও তাই। সুস্পষ্টভাবেই আপনার রেস্টুরেন্ট-এর প্রতিটি খাবারের মান এমন হওয়া উচিত যা কিনা অতুলনীয় এবং খাবারটি এতোটাই সুস্বাদু যে এটি নিজেই নিজের মার্কেটিং করে ফেলতে পারবে। কিন্তু এটি যদি নিশ্চিত করতে না পারেন তবে অতিশীঘ্রই ধস নামবে।
লোকেশন
স্পষ্টতই আপনার খাবারের আইটেম এবং এর গ্রাহক অনুযায়ী যদি রেস্টুরেন্ট এর লোকেশন না হয়, তবে অতি দ্রুত এটি মুখ থুবড়ে পড়বে। এজন্য বুঝে শুনে লোকেশন বাছাই করুন।
একজন শেফের উপর নির্ভর করবেন না
যেকোনো সময় শেফের উধাও হয়ে যাওয়া বা পদত্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকুন। আপনার শেফ আপনার এখানে জয়েন করার জন্য যেমন তার আগের কর্মস্থল থেকে স্বল্প সময়ের নোটিশে উধাও হয়েছেন , ঠিক আপনার এখান থেকে অন্য কোথাও জয়েন করার জন্য ইহার পুনরাবৃত্তি ঘটাবেন। এজন্য হাতে একাধিক অপশন রাখুন।
অতিরিক্ত আবেগপ্রবণতা থেকে বিরত থাকুন
আপনি যদি ভাবেন মালিক হয়ে কর্মীদের পরিবারের সদস্য হিসেবে যত্ন নিবেন এবং এতে ব্যবসার উন্নতি হবে, তাহলে চূড়ান্ত ভুল করেছেন। কাজের জায়গায় কাজ এবং কাজ ছাড়া অন্যকোনো সম্পর্ক তৈরি হওয়া উচিত নয়। যদিও আমি এখানে কোনোভাবেই হিউম্যান রিসোর্স নিয়ে বিতর্ক শুরু করতে চাই না, তবে বাঙালি মাত্রই অত্যন্ত আবেগপ্রবণ। এগুলি সাময়িকভাবে খুব ভাল লাগলেও একাউন্টিবিলিটি যদি ধরে না রাখেন তবে শীঘ্রই আপনি মালিক হিসেবে নিজের প্রয়োজনীয়তা হারাবেন।
সাফল্য পাওয়ামাত্রই সিদ্ধান্তে উপনীত না হওয়া
একটা ব্রাঞ্চ সাফল্যের মুখ দেখামাত্রই সাথে সাথে আরও ৫টি খোলার জন্য ব্যস্ত হবেন না অথবা বিনিয়োগকারীকে তাৎক্ষণিক ইনভেস্ট করার জন্য অনুরোধ করবেন না। সময় নিন এবং পর্যবেক্ষণ করুন। যতক্ষণ পর্যন্ত পুরোপুরি নিশ্চিত না হচ্ছেন ততক্ষণ পর্যন্ত এই রিস্ক নিবেন না।
সুতরাং! আপনার ব্যবসা ধুপধাপ বন্ধ হওয়া থেকে বাঁচাতে যোগাযোগ করুন ফ্যাট ম্যান ফিল্মে। জাস্ট কিডিং! তবে হ্যা, অবশ্যই উপরোক্ত বিষয়গুলি নিয়ে ভাবুন এবং খুঁজে বের করুন কোথায় গুরুত্ব দিলে আবারো ঘুরে দাঁড়াবে আপনার রেস্টুরেন্টটি। কারন দিন শেষে কোয়ালিটি খাবারের সাথে কন্টেন্ট কি যাচ্ছে সেটিই যেহেতু গ্রাহকের নজর কাড়ে, সেহেতু একই ছবি এদিক ওদিক করে খুব বেশিদিন গ্রাহক ধরে রাখার চিন্তাটি ব্যাকডেটেড।
ফ্যাট ম্যান ফিল্ম বাংলাদেশের একটি সৃজনশীল প্রোডাকশন এজেন্সি। ফ্যাট ম্যান ফিল্ম কমার্শিয়াল ফটোগ্রাফি, ভিডিওগ্রাফি, ডিজিটাল মার্কেটিং এবং ব্র্যান্ডিং এর সকল সেবা দিয়ে থাকে।
ফ্যাট ম্যান ফিল্মের সাথে যোগাযোগ করুনঃ +৮৮০ ১৭১৬ ৭১৬ ১৬৪ । ফেসবুক । ইনস্টাগ্রাম । www.fatmanfilm.com